কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও বিপদসঙ্কুল অবস্থা বা কাজ করার সময় যন্ত্রপাতি যার দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন সম্ভাব্য দুর্ঘটনার কারণকে ঝুঁকি বলে। কর্মক্ষেত্রের অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র ও সমস্যাসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো।
ক. বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র : আজকাল বসতবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি সকল স্থানেই বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া সব শিল্প প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যুৎ ব্যবহার অত্যাবশ্যক। এ অত্যাবশ্যকীয় শক্তির অনিরাপদ ব্যবহারের ফলে অনেক সময়ই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।
▪️ওয়েল্ডিং মেশিন থেকে এক ধরনের রশ্মি নির্গত হয়, যা চোখের সাময়িক ক্ষতিসহ স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে । ইহা বিকির্ণ রশ্মি বা রেডিয়েশন আপদের উদাহরণ।
▪️দৈনন্দিন জীবনে আমরা Extremely low frequency (ELF) বিকিরণের সাথে জড়িত। এটি শুধু বিদ্যুৎ এবং কম্পিউটার মনিটর থেকেই হয় না বরং সূর্যরশ্মি, আগুন এবং পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র থেকেও হয়ে থাকে।
▪️আমরা প্রতিদিন বাসায় এবং কাজের স্থানে বিদ্যুৎ, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, সূর্য হতে প্রাপ্ত বিকিরণে এক্সট্রিমলি লো-ফ্রিকুয়েন্সির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি। এছাড়াও কম্পিউটার মনিটরও ELF-এর একটি উৎস। গর্ভাবস্থায় দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের স্ক্রিনের সম্মুখে বসে কাজ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
▪️অনেক সময় বিদ্যুৎ থেকে শর্টসার্কিটের ফলে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
খ. মেশিন হ্যাজার্ড : মেশিনের গার্ডসমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখতে হয়। গিয়ার, স্প্রোকেট, চেইন, বোল্ট শ্যাফট ইত্যাদিতে অনেক সময় সঠিকভাবে গার্ড থাকে না। ফলে এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয় ।
গ. ফায়ার হ্যাজার্ড বা অগ্নি বিষ্ফোরণ : অগ্নিকাণ্ড ঘটানো মূল ভিত্তি হলো দাহ্য বস্ত্র, অক্সিজেন, তাপ এবং এদের মধ্যকার অবিচ্ছিন্ন বিক্রিয়া। উল্লিখিত উপাদানসমূহের যেকোনো ভাবে একত্রিত হলে এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাতে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
ঘ. ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম : ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতি, যেমন- এ্যাপ্রোন, গগলস, রেসপিরেটরি, নিরাপত্তা টুপি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও আংটি ও হাত ঘড়ি পরে চলন্ত মেশিনারিতে কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ঙ. যন্ত্রপাতিসমূহ : আধুনিক কারখানায় উৎপাদান কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রায় প্রতিটি যন্ত্রপাতিই গতিশীল। কারখানায় ব্যবহৃত এ সব যন্ত্রপাতির গতিশীল অনিরাপদ অংশের দ্বারা প্রতিনিয়তই ছোট বড় নানা ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে।
▪️বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মেশিনারির ঘূর্ণায়মান অংশের মাধ্যমে কর্মী আহত হতে পারে।
▪️বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, শীটমেটাল ওয়ার্কশপ এবং কলকারখানার যন্ত্রপাতি ও মেশিন থেকে প্রচন্ড শব্দ নির্গত হয়। এ শব্দ মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্রবণশক্তি লোপ পেতে পারে। আবার মনুষ্য সৃষ্ট হৈ চৈ হঠাৎ কোনো কর্মীকে অমনোযোগী করতে পারে, যা দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে ।
চ. রাসায়নিক আপদ : রাসায়নিক পদার্থের সক্রিয় বিক্রিয়ার ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। এ সমস্ত বিক্রিয়ার কোনটির ক্ষেত্রে তাপ সংযোজন, আবার কোনটির ক্ষেত্রে তাপ বিয়োজন হয়ে থাকে। তবে এই উভয় ধরণের বিক্রিয়াস্থলই অস্বাভাবিক তাপের প্রভাবমুক্ত নয়। সে কারণে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক বিক্রিয়াস্থল দহনজনিত দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ছ. মালামাল স্থানান্তরে : কৌশলগত অবস্থান ও সঠিক পদ্ধতি ব্যতিরেকে, যে কোনো অল্প ওজনের জিনিসপত্র উত্তোলনের সময়ও শরীরের কোনো না কোন অংশে টান বা মোচড় লাগতে পারে। যার ফলে শরীরের মাংশপেশি, শিরা অথবা অস্থিতে সাময়িক পীড়া অথবা স্থায়ী জখম হতে পারে।
জ. টুলসমূহ : প্রতিটি জবের জন্য সঠিক টুল ব্যবহৃত হচ্ছে কি না। যেমন— ফাইল, চিজেল, হাতুড়ি, রেঞ্চ, স্ক্রু-ড্রাইভার ইত্যাদি সঠিক আছে কি না এবং স্পিড সঠিকভাবে সেট করা আছে কি না তা দেখা। অনেক সময় এসব যন্ত্রপাতি ছুটে গিয়ে অনেকেই আহত হতে পারে।
স্বাস্থ্য, জীবন, সম্পত্তি বা পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাব্য ঝুঁকি বা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে যাওয়া অবস্থাই হলো জরুরি পরিস্থিতি। জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুতি করা কর্মস্থলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটির আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নিম্নে সচরাচর জরুরি পরিস্থিতি, জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি ও জরুরি পরিস্থিতির বিষয় উল্লেখ্য করা হলো।
ক. সচরাচর জরুরি পরিস্থিতি—
▪️অগ্নি অথবা বিস্ফোরণ।
▪️মেডিকেল ইমার্জেন্সি ।
▪️খারাপ আবহাওয়া।
▪️মেজর পাওয়ার ফেইলিওর।
▪️ভূমিকম্প ইত্যাদি।
খ. জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি— জরুরি পরিস্থিতিতে যথাযথ ব্যবস্থা, যেমন-
▪️অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।
▪️প্রাথমিক চিকিৎসা।
▪️জরুরি চিকিৎসা ও হ্যাজার্ড অপসারণ ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
গ. একজন কর্মী হিসাবে, জরুরি পরিস্থিতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা দরকার—
▪️সচরাচর জরুরি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হবে।
▪️কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সাড়া দেওয়া।
• জরুরি অ্যালার্ম চালু হলে সাড়া দেওয়া।
▪️জরুরি পরিস্থিতিতে বাইরে বের হওয়ার জন্য ব্যবহৃত সিম্বলসমূহ অনুসরণ করে বের হওয়া।